নিজস্ব প্রতিবেদক ।
যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও তার স্বজন কর্তৃক গৃহবধূ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতিতা নারী সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের নোয়াপাঁড়ার বাসিন্দা মৃত সৈয়দ তরব আলীর কন্যা সৈয়দা সাবিহা বেগম সাদিয়া। স্বামী সাইফুর রহমান সাজাওয়ার ও তার ভাই-বোনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে সম্প্রতি ১১ (গ) এবং ৩০ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা সাদিয়া। এর আগে নির্যাতিতা সাদিয়াকে স্বামী বন্দি করে রাখলে তার ভাই সৈয়দ আল আমিন জগন্নাথপুর থানা ও আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০০ ধারায় নালিশা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ গৃহবধূ সাদিয়া ও তার শিশু সন্তান ইসফাক রহমান জিমামকে সম্প্রতি উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের মোঃ আশিক মিয়ার পুত্র নুরানী মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ সাইফুর রহমান সাজাওয়ারের সাথে বিগত ২০২০ ইং সনে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক সাদিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়। সাজাওরের ঔরসে ও সাদুয়ার গর্ভে ২০২১ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে স্বামী স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ হারালে স্বামীর পরিবারের সদস্যদের প্ররোচণায় স্ত্রীর কাছে যৌতুকের জন্য লালসা তৈরী হয়। যৌতুক দাবি করে স্বামী সাজাওয়ার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় শারীরিকভাবে প্রহার করেন। এমতাবস্থায় সাদিয়ার ভাই সৈয়দ আল আমিন ৫০ হাজার টাকা যৌতুক প্রদান করেন। পরে সাজাওয়ার বিভিন্ন ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে সাদিয়ার স্বজনদের কাছে আরো ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন বসেন। চলতি বছরের ১০ মে স্বামী সাজাওয়ার সাদিয়ার কাছে ২ লক্ষ টাকা দিতে জোর জবরদস্তি করেন। এমতাবস্থায় সাদিয়া অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী সাজাওয়ার, ২ নং আসামী বোন আলেয়া বেগম ও ৩ নং আসামী ভাই আনোয়ার হোসেন কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে পিঠসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম করে। বিষয়টি ভাই আল আমিনকে জানালে চিকিৎসার জন্য পৈতৃক নিবাসে নিতে বললে যৌতুক দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত স্ত্রীকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে । বোনকে উদ্ধার করার জন্য ভাই সৈয়দ আল আমিন জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জগন্নাথপুর থানা পুলিশ কোর্টে দরখাস্তের পরামর্শ দেন। সৈয়দ আল আমিন চলতি বছরের ১৫ সুনামগঞ্জে গিয়ে আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জগন্নাথপুর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারা বিধান মতে সি, আর ৮৮/২৪ইং (জঃগ) মামলা দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ স্বামী গৃহ থেকে সাদিয়াকে উদ্ধার করেন। এমতাবস্থায় নির্যাতিতা সাদিয়া আসামীদের গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ ও সুবিচার দাবি করেন।
সাদিয়ার মাতা মোছাঃ রাশিয়া বেগম জানান, সাইফুর রহমান সাজাওয়ারের সাথে আমার মেয়ের বিয়ের বছরখানেক পর যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম আছে। আমরা আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সুবিচার চাই।
উদ্ধারকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান বলেন, আদালতে গৃহবধূ সাবিহা বেগম সাদিয়ার ভাইয়ের একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আদালত থেকে একটি অনুলিপি পাই। পরে ওই গৃহবধূ ও তার শিশু সন্তানকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেই।