রাশেদ ইসলাম, বিশেষ সংবাদদাতাঃ
জয়পুরহাটে প্রতারণা আর প্রতারক চক্রের খপ্পরে একদিকে অনেকেই সর্বশান্ত, অপরদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তবে এবার জয়পুরহাট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব এর নিরলস প্রচেষ্টায় একের পর এক অপরাধী ১৪ শিকের ভেতরে ঢুকতে শুরু করেছে।
এবার জেলা ডিবি পুলিশ সদস্য দের হাতে প্রতারক চক্রের তিনজন গ্রেফতার হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্ব অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধানমন্ডি এলাকার মোঃ সামসুল ইসলামের ছেলে মোঃ পারভেজ হোসেন (৩৫),সোটাহার ধারকী গ্রামের কাজী মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে কাজী মাহফুজুর রহমান মাস্টার (৫০), কে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন এবং কৌশলে
অপর আসামী সাবিনা ইয়াসমিন কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, ভিকটিম মীর মাহবুবুর রহমান (৫৭), পিতা-মৃত মীর মাসুদার রহমান, মাতা-মৃত মাসুদা খানম, সাং-ধারকী মীরপাড়া, ডাকঘর-ধারকী, থানা-জয়পুরহাট সদর, জেলা-জয়পুরহাট জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হতে মাগরিবের নামাজ শেষে সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় অপরিচিত ০১৭২৯-৯৩৮৮৮৫ নাম্বার হতে বাদী/ভিকটিমের মোবাইল
নং-০১৯৭২-৪২৯৪৩০ নাম্বারে কল দিয়ে বিপরীত পাশ হতে জনৈক মহিলা ছাত্রীর মা পরিচয় দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে দেখা করতে চান। বাদী/ভিকটিম আল মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলে (আসামী সাবিনা) পথি মধ্যে দেখা করে বলে, স্যার আপনার স্কুলে একজন অবিবাহিত শিক্ষক আছে তাকে দিয়ে আমার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতেন। এটা বলার জন্য আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম মনে কিছু করবেন না স্যার। অতঃপর বাদী/ভিকটিম কোথায় যাচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করলে বাদী জানায় তার খালাতো ভাইয়ের বাসা জয়পুরহাট সদর থানাধীন বিশ্বাস পাড়াতে যাচ্ছে। বাদী রিক্সা যোগে রওনা দিয়ে কৃষি অফিসের সামনে অনুমান সন্ধা ০৭.৩০ ঘটিকার সময় পৌঁছালে উক্ত মহিলা
পিছন থেকে স্যার স্যার বলে পুনরায় বাদীকে ডাক দিলে বাদী রিক্সা হতে নামলে জনৈক মহিলাসহ আরও একজন মহিলা বাদীর দিকে এগিয়ে আসে এবং কথা বলতে থাকে। ঐ সময় জনৈক দুইজন মহিলার পরিচিত দুই জন লোক (আসামী মোঃ পারভেজ এবং মোঃ খলিল) মোটরসাইকেল যোগে এসে ভিকটিমের পার্শ্বে দাড়ায় এবং মহিলাদ্বয়ের সঙ্গে তারা কথা বলে। একপর্যায়ে তারা ভিকটিমকে মোটরসাইকেলে উঠতে বলে। তবে ভিকটিম মোটরসাইকেলে উঠতে অ-স্বীকৃতি জানায়। তারা জোর করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে মাফলার দিয়ে বাদীর দু‘চোখ পেচিয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে নিষেধ করে। পরে বাদীকে তারা অজ্ঞাত এক বাড়ীতে ছোট্ট একটা রুমে নিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেয় এবং বাদীর কাছে ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ ) টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণ না দিলে প্রাণনাশের হুমকি
প্রদান করে। ঘরের মধ্যে ঢোকানোর পরে বাদীর কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ ৮,২০০/-(আট হাজার দুইশত) টাকাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। বাদী তাদের চাওয়া ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ) টাকা দিতে অপারগতা ও অস্বীকৃতি জানালে তারা কিছুটা কমে মোট ৩,০০,০০০/-(তিন লক্ষ ) টাকা দাবী করে। উক্ত টাকা না দিলে অপর একটি মেয়েকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে ভিডিও/স্থির চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দিবে মর্মে বাদীকে হুমকী প্রদান করে এবং কিছু সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে এবং ছবি উঠায়। পরে আসামীগণ বাদীকে মোটরসাইকেল যোগে চিনি কল রোড মধুমিতা সুইটস এর সামনে নিয়ে আসে। মধুমিতা রেস্টুরেন্টে আসার পর বাদীর
পূর্ব পরিচিত মোঃ আব্দুল জলিল (৫০), মোটরসাইকেল পার্স এর দোকান চিনিকল রোড, পিতা-মোঃ সামছুল হক, সাং-তাজুর মোড়, থানা ও জেলা-জয়পুরহাট এর নিকট থেকে গত ২৬/০২/২০২৫ সময় রাত্রী অনুমান ০৮.১০ ঘটিকায় তাৎক্ষনিক ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ধার নিতে বলে। পরবর্তীতে বাদীর সঙ্গে খলিল এবং পারভেজ সোটাহার গ্রামে নিয়ে গিয়ে হাসান এর বাড়ী থেকে ৫০,০০০/- হাজার টাকা মুক্তিপণ হিসাবে গ্রহণ করে। পরের দিন তারা আরোও ১,৩০,০০০/- (এক লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বাদী তাদের চাহিদা মত উক্ত টাকা প্রদান করলে বাদীকে মুক্ত করে দিবে এবং মোবাইলে ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও মুছে দিবে। পরবর্তীতে ২৭/০২/২০২৫ খ্রিঃ অনুমান বিকাল ০৪.০০ ঘটিকার সময় জয়পুরহাট সদর থানাধীন চিনিকল রোড জেন্স পার্লার এর উত্তর পার্শ্বে ফাঁকা জায়গায় মোট ১,৩০,০০০/- (এক লক্ষ ত্রিশ হাজার)
টাকা আসামী পারভেজ ও আসামী খলিলকে প্রদান করে। গত ০৩/০৩/২০২৫ খ্রি. অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময় বর্ণিত আসামী মোঃ মাহফুজ, পারভেজ ও খলিল বাদীর ধারকি মীরপাড়াস্থ বসত বাড়ীতে দেখা করে এবং সাক্ষী মীর মইনুল ইসলাম (৪৫), মীর আফতাব হোসেন (৫৮), দ্বয়ের সম্মুখে বাদীকে বাড়ীর পাশে ডেকে এনে আবারও ১,২০,০০০/-(এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে প্রথম ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২৬/০২/২০২৫ খ্রি. ধারণকৃত ভিডিও/স্থির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দিবে এবং বর্ণিত মেয়েকে বাদীর বাড়ীতে প্রবেশ করে মান সম্মানের হানি করবে মর্মে হুমকি প্রদান
করে। বাদী নিরুপায় হয়ে গত ১০/০৩/২০২৫ খ্রি. ১,২০,০০০/-(এক লক্ষ বিশ) টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রতি প্রদান করে। বর্ণিত বাদী পুলিশ সুপার, জয়পুরহাট এর কাছে বিষয়টি জানালে তৎক্ষনাৎ পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বিষয়টি ওসি ডিবি মোঃ আসাদুজ্জামান কে দ্রত কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে বলেন। ১০/০৩/২০২৫ খ্রি. অনুমান দুপুর ০২.১৫ ঘটিকার সময় জয়পুরহাট সদর থানাধীন চিনিকল রোডে জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে ফাঁকা জায়গায় নগদ ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান করে আসামী পারভেজ বুঝিয়ে নেয়ার সময় ওৎ পেতে থাকা ডিবি পুলিশ আসামী আরও অজ্ঞাত ৪/৫ জন কৌশলে পালিয়ে যায়। আসামী পারভেজ এর দেওয়া তথ্য মতে ডিবি পুলিশ পারভেজ এর মোবাইল দিয়ে সাবিনাকে কৌশলে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন, এবং তাদের কে ঘটনাস্থলে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে হেফাজতে নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।