স্টাফ রিপোর্টার:
সাহিত্য সর্বোত্তমভাবে মানব সমাজের নান্দনিক নীলনকশা প্রদান করে। সাহিত্য কেবল একটি ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক নিদর্শন নয়; এটি অভিজ্ঞতার একটি নতুন জগতের ভূমিকা হিসাবে পরিবেশন করে। বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ও শক্তি নতুন করে প্রমাণিত করার কিছু নেই। বাংলা সাহিত্যের প্রাণ নির্যাস এতটাই গভীর যে সেখানে প্রাণপণ সাঁতার কাটলেও কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাহিত্যের বহুবিধ শাখা প্রশাখা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রায়োগিক ও সামষ্টিক শাখা হলো নাটক। নাটক শুধুমাত্র বইয়ের পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কলাকুশলীর মাধ্যমে পাঠক তথা দর্শকের সামনে মঞ্চায়িত হয়। এই একটি মাধ্যম যা সরাসরি কলাকুশলীর শারীরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে দর্শক সাহিত্যের এক নান্দনিক দৃশ্যকাব্যের স্বাদ আস্বাদন করেন।
হাজার মালভূমির বাংলাদেশে অনেক শক্তিমান নাট্যকারের আবির্ভাব ঘটেছে। উত্তর আধুনিক নাট্যকার হিসেবে সেলিম আল দীন বাংলা নাট্য সাহিত্য যুগান্তকারী গোড়াপত্তন করেছেন। সেলিম আল দীনের পর বাংলাদেশের উত্তর আধুনিক নাট্য সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী এবং শক্তিশালী নাট্যকার হলেন বদরুজ্জামান আলমগীর। তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে হাজার মালভূমির বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, দর্শন এবং ঐতিহ্যকে বিশ্ব সাহিত্য দরবারে নতুন দিগন্তের পথ উন্মোচন করার পাশাপাশি জীবনের সূক্ষ্মতম বোধগুলোকেও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীরের নাটক বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পঠন-পাঠন ও চর্চিত হয়ে আসছে। নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীরের প্রকাশিত নাটকের বই নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে, আবের পাঙখা লৈয়া। তিনি সম্পত্তি সমর্পণ, এক যে আছেন দুই হুজুর নামে দুটি নাটকের নাট্যরূপ করেছেন। তাঁর মৌলিক নাটকগুলো হলো— আঁচল হিমাদ্রি, ইলেকশন বাজারজাতকরণ কোম্পানি লিমিটেড, পরীগাঁও, বাঘ, লেনিন কোথায়, যোজনগন্ধা মায়া, পেঁয়াজ কাটার ইতিহাস, চন্দ্রপুরাণ, নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে, আবের পাঙখা লৈয়া, জুজুবুড়ি, অহরকণ্ডল, ভাসিয়া যায় লাল গেন্দাফুল, ডুফি কীর্তন, পানিবালা, প্রত্নপ্রতিমা, পুণ্যাহ, কাক সম্প্রদায়। নাট্যকার নির্দেশিত নাটকসমূহ হলো— আঁচল হিমাদ্রি, ইলেকশন বাজারজাতকরণ কোম্পানি লিমিটেড, বাঘ, লেনিন কোথায়, পেঁয়াজ কাটার ইতিহাস, আদাব, চন্দ্রপুরাণ, যোজনগন্ধা মায়া, সুই, উৎখাত ইত্যাদি। তিনি ১২টির অধিক পথনাটক রচনা করেছেন।
এছাড়াও এই নাট্যকার কবিতা ও অনুবাদের ক্ষেত্রেও গভীর অবদান রেখেছেন। সাম্প্রতিক ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে ২৬ জানুয়ারি, রবিবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই স্থগিতাদেশেও অনেক সাহিত্যমনা মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করে। প্রশ্ন উঠে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের স্বচ্ছতা নিয়ে। ইতিমধ্যে অনেক নাট্যজন, নাট্যকর্মী এবং সাহিত্য-শিল্পমনা মানুষ প্রশ্ন তুলে বলেন বাংলাদেশের বর্তমানে সবচেয়ে নান্দনিক, জীবনবোধের নিগূঢ় সত্য অন্বেষণকারী শক্তিশালী নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীরকে কেন এখনও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়নি।
অভিনেতা ও নির্দেশক আশিষ খনন্দকার বলেন, আমার নব্বইয়ের দশক থেকে এপর্যন্ত পর্যবেক্ষণে আমি একটি সুনির্দিষ্ট সত্যের মুখোমুখি দাঁড় হয়েছি। বদরুজ্জামান আলমগীর হচ্ছেন নাট্যসাহিত্যে যেকোন পদক পাওয়ার প্রথম দাবীদার। এর পরে আর কোন কথা থাকবে না। থাকলে আমরা ধরে নিবো এটি একটি নির্দিষ্ট পক্ষের সিদ্ধান্ত।
এছাড়াও অনেক শিল্পী ও সাহিত্যিক আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীরকে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’ প্রদানের জন্য জোর দাবি জানায়।