সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এরশাদ হোসেন পাপ্পু :
গোটা শহরে নারী পুরুষসহ সববয়সী মানুষের ভীড়। সবার হাতেই শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শপিং ব্যাগ। কারও হাতে পোশাক,বা কারও হাতে জুতা স্যান্ডেলের ব্যাগ। এসব দৃশ্য দেখে বুঝা যাচ্ছে ঈদ ঘনিয়ে আসছে।
আর ঈদ উৎসবকে ঘিরে মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈয়দপুর শহরের সব মার্কেট। চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় বিপনী বিতানগুলোতে এখন মানুষজনের উপচেপড়া ভীড়। বিশেষ করে কাপড়ের দোকানগুলোর তৈরী পোশাক ও থান কাপড়ের পসরা নিয়ে ক্রেতা আকর্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছে ব্যবসায়ীরা।
নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ উৎসব কল্পনা করা যায় না বলেই মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের পদচারণা শুরু হয়ে গেছে। রমজানের প্রথম সপ্তাহ ঢিলেঢালা গেলেও দ্বিতীয সপ্তাহ থেকে শহরের বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে ভীড় বাড়তে শুরু করেছে সব শ্রেণি পেশার মানুষজনের। যারা দর্জি বাড়ির তৈরী পোশাক পরতে পছন্দ করেন, তারা এখন ভীড় করছেন থান কাপড়ের দোকানে। পুরুষ-মহিলারা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন পছন্দের দেশি বিদেশি থান কাপড় কিনতে।
এছাড়াও সব শ্রেণীর ক্রেতারা পছন্দের তৈরী পোশাক কিনতে ঢু মারছেন এ মার্কেট থেকে ও মার্কেটের গার্মেন্টস দোকান গুলোতে। বাজারে কিশোরী থেকে শুরু করে সববয়সী নারী ক্রেতার পদচারণা সবচেয়ে বেশী।
ফলে সকল শ্রেনীর ক্রেতাদের আগমনে বিক্রিবাট্টা এখন তুঙ্গে। কারণ চাকুরিজীবীদের বেতন বোনাস হওয়ায় ঈদ বাজার ভালোই জমেছে। কয়েকদিন আগে গ্রামাঞ্চলের ক্রেতাদের তেমন দেখা না গেলেও এখন তারাও দলবেঁধে মার্কেটে আসছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। তাদের আগমন চোখে পড়ার মত। ঈদ বাজারের মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রমজানের শুরুতে ঢিলেঢালা অবস্থা থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে ক্রেতারা মার্কেটমুখী হয়েছেন। দোকানীরাও নিত্য নতুন তৈরী পোশাক ও কাপড় তুলেছেন দোকানে। মার্কেটগুলোতে ব্যস্ততা এখন তৈরী পোশাক ও বাহারী কাপড় ঘিরে। ক্রেতারা বাছাই করছেন তাদের পাঞ্জাবী,প্যান্ট, সার্ট, থ্রি পিসসহ বিভিন্ন ডিজাইনের বাচ্চাদের তৈরী পোশাক। ঈদের কেনাকাটায় বাহারি কাপড় আর হাল ফ্যাশনের গার্মেন্টস পোশাকের জন্য সুপার মার্কেট ও নিউ ক্লথ মার্কেটের আলাদা কদর রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। ক্রেতারা প্রথমে ছুটে আসেন এসব মার্কেটে পছন্দের পোশাক খুঁজতে। দোকানীরা ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মজুদ করেন দেশীয় উন্নতমানের থান কাপড়, তৈরী পোশাকসহ, ভারতীয় ও পাকিস্তানের বর্ণীল পোশাক। এবার ঈদের বাজারে এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সর্বশেষ বের হওয়া নজরকাড়া পোশাক পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটগুলোর এসব দোকানে। মার্কেটের সুনাম বজায় রাখতে প্রতিটি দোকানী বিপুল পরিমাণ পোশাক সংগ্রহে রেখেছেন। যাতে কোন ক্রেতা যেন বিমুখ না হন মার্কেট থেকে।
সরেজমিনে শহরের ওইসব মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানেই ক্রেতাদের আনাগোনা। এসব মার্কেটে মহিলা, তরুণী ও
পরিবারের সন্তানদের নিয়ে আসা অভিভাবকদের দেখা যায় দরদাম করতে। দাম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার সবধরনের কাপড়সহ তৈরি পোশাকের দাম কিছুটা বেড়েছে। দোকানীদের অভিমত কাপড়ের দাম সামান্য বাড়লেও বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। ঈদের বোনাস ও ব্যবসার কারণে চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা রয়েছে। সব
মিলিয়ে ক্রেতাদের যেমন সমাগম বাড়ছে, তেমনি বেচা বিক্রি ভালই হচ্ছে।
পৌর সুপার মার্কেটের, সাজু ক্লথ স্টোরের মো. সাজু বলেন , বেচা বিক্রি জমে উঠেছে, তার দোকানে দেশী বিদেশী ফ্যাশন ও ব্র্যান্ডের শাড়ি কাপড়সহ সবধরণের পোশাকের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া হাল ফ্যাশনের সব ধরণের শাড়ী, থ্রিপিস, শার্ট ও প্যান্ট পিসসহ দেশী বিদেশী পণ্যের সমারোহ ঘটানো হয়েছে তার দোকানে ।
এবার হাল ফ্যাশনে পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশী। হংকং,তাওয়াক্কাল,নুরশ্ধসঢ়; মিডজল, লাবিশা, বিন সাইফ, বিন হামিদ নামে পোশাকের প্রতি নারীদের দূর্বলতা বেশী দেখা যাচ্ছে শহরের নিউ ক্লথ মার্কেটের অভিজাত দোকান থ্যাংকস ক্লথ স্টোর-২ এর মালিক একরামুল হক জানান, দোকানে হাল ফ্যাশনের সব পোশাক রাখা হয়েছে। তার দোকানের সংগ্রহে রয়েছে দেশী, বিদেশী ও পাক-ভারত অঞ্চলে এখন যা চলছে এমন ফ্যাশনের পোশাক। এবারও বিভিন্ন ব্রান্ডের পাঞ্জাবী ও গেঞ্জি সেটের ক্রেজ চলছে। এছাড়াও ঈদের আগ পর্যন্ত যখন যে ফ্যাশন বের হবে তা তার দোকানে পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, থান কাপড় ও তৈরী পোশাকের গুনগত মান নিয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা দেন প্রতিষ্ঠান মালিক একরামুল হক।
শহীদ ডা. শামসুল হক সড়কের ঢাকা ফ্যাসনের মালিক নাজমুল হোসাইন মিলন জানান, তার দোকান পাঞ্জাবী আইটেমের জন্য খ্যাত। এবার ঈদেও বিভিন্ন কোম্পানীর নজরকাড়া ডিজাইনের পাঞ্জাবী তোলা হয়েছে। ছেলে ও মেয়েদের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকও রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানে।
ক্রেতাদের চাহিদা ও পছন্দের বিষয়টি মাথায় রেখে বাহারী সব কাপড় সংগ্রহে রয়েছে। সাশ্রয়ী দামে চলতি ফ্যাসনের সব রকম পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি পোশাকের ডিজাইনে নতুনত্ব রয়েছে, পছন্দেও সেরা।
বস টেইলাসের পরিচালক মো. লাড্ডু জানান, রমজানের শুরুতে অর্ডার নেওয়া হালকা থাকলেও এবার সে অবস্থা আর নেই। সেলাইয়ের প্রচুর অর্ডার এসেছে। এখন সেলাইয়ে ব্যস্ত কারিগররা। অনেক প্রতিষ্ঠান সেলাইয়ের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করেছে। নারীদের পোশাক তৈরীর প্রতিষ্ঠান সৌখিন টেইলার্সের কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে সেলাই মেশিনের চাকা। প্রতিষ্ঠানের মালিক পারভেজ জানান, বর্তমানে তাদের দম ফেলবার ফুরসত নেই।