আঃ হামিদ, স্টাফ রির্পোটার:
সাতক্ষীরার নলতায় বিশ্বের তৃতীয় ও দেশের বৃহত্তম ইফতারের আয়োজন করা হয় বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬ হাজার রোজাদার সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে বিশাল ছাউনির নিচে বসে প্রতিনিদিন একত্রে ইফতার করেন।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দেশের সর্ববৃহৎ ইফতার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফের হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণে। আয়োজকদের দাবি পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফ ছাড়া নলতার মত এতো বড় ইফতার মাহফিল বিশ্বে আর কোথাও হয় না। সওয়াব হাসিলের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইফতারের উদ্দেশ্যে নলতায় ছুটে আসেন রোজাদাররা। ধনী, গরিব নির্বিশেষে সব মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে ইফতার করেন। সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর রমজানে ইফতারের আয়োজন করে আসছে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন। অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, আত্মাধিক সাধক, সমাজ সংস্কারক, মুসলিম রেনেঁসার অগ্রদূত, শাহ ছুফী খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.)এর নলতা রওজা শরীফে ২৬ লাখ টাকা ব্যায়ে বিশাল টিনের ছাউনি নির্মাণ করে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করে যাচ্ছে আয়োজক কমিটি। এর মধ্যে ৬ হাজার মুসল্লি রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে এই বিশাল ছাউনির নিচে বসে একত্রে ইফতার করেন। বাকী চার হাজার মানুষের ইফতার এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মিশন ও বাড়িতে বাড়িতে পাঠানো হয়। এখানে ফকির, মিসকিন, গরীব, ধনীসহ সব শ্রেণীর মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে প্রতিদিন এই ইফতার মাহফিলে অংশ নেয়। সাওয়াব হাসিলের জন্য দূর-দূরন্ত থেকেও ইফতারের উদ্দেশ্য রোজাদাররা ছুটে আসেন নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে। ইফতার শেষে এই প্রাঙ্গনেই মাগরিবের নামাজ আদায় করা হয়। বর্তমান এই ইফতার মাহফিলের পরিধি বেড়ে এখন ১০ হাজারে উপরে পৌঁছেছে। তবে কতৃপক্ষের দাবি, পবিত্র কাবা শরীফের পর বিশ্বে এটিই ইফতারের সর্ববৃহৎ আয়োজন। এখানে ইফতারি বিলি-বণ্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে ৪ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিয়েছি মক্কা ও মদিনার পরে একসাথে এতো মানুষের ইফতারের আয়োজন আর কোথায় হয় না। নলতা আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতারকে আমরা বিশ্বের তৃতীয় ও দেশের বৃহত্তম বলছি কারণ অনেক বছর ধরে আমারা একটানা ত্রিশ দিন ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজ করে আসছি। মক্কা ও মদিনার পর আমরা ছাড়া আর কেউ টানা ত্রিশ দিন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেনি।
সাতক্ষীরার নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের হিসাব রক্ষক জানান, হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) তার জীবদ্দশায় রমজান মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন। পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যুর পরও মিশন কর্তৃপক্ষ এ ইফতার মাহফিল অব্যাহত রেখেছে। ইফতার সামগ্রী বিতরণের জন্য রয়েছে চার শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। ইফতারের তালিকায় রয়েছে ফিরনি, ডিম, চিড়া, ছোলা ভূনা, খেজুর, সিঙ্গাড়া ও কলা। প্রতিদিন ২০ মন দুধের ফিরনি তৈরি করা হয় এখানে। তিনি আরও বলেন,‘রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার প্লেটে ইফতার প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও নলতা শরীফের আশপাশের এলাকার মসজিদে ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার রোজাদারের ইফতার। এ ছাড়াও রয়েছে পানি পানের বিশেষ ব্যবস্থা। ইফতার বাবদ প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। দেশ বিদেশের ভক্তগণ যৌথভাবে এই ইফতারের অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা মক্কা ও মদিনা শরীফের পর বিশ্বে এটিই ইফতারের সর্ববৃহৎ আয়োজন। দেশের বা বিশ্বের কোথায় বড় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয় সেটা একদিন বা দুই দিন কিন্তু আমাদের এখানে আয়োজন নিয়মিত হচ্ছে।