* সিলেটের গোয়ানঘাট,জৈন্তাপুর থানায় স্বর্ণের ডিম, আলাদিনের চেরাগ!
সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো>>
সিলেটের জৈন্তাপুরে অবৈধ বালি উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক নাজমুলের হাত কেটে নেয়া হুমকি দাতা বারকি শ্রমিক নেতা আমীর আলীকে গ্রেপ্তারে পুলিশ লুকোচুরি খেলা। অভিযোগ উঠেছে দফারাফায় ব্যস্থ্য ওসি নিজেই। যদিও এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, তবুও টনক নড়ছেনা জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। এতে সন্দেহের তীর এখন স্থানীয় প্রশাসনের দিকে। তাহলে কি ওসি এবং ইউএনও তারাও কোনভাবে অবৈধ বালি উত্তোলনের পক্ষে সেই প্রশ্ন জনমনে?
এদিকে মঙ্গলবার সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে জৈন্তাপুর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় স্বম্ভে দুপুর ২ টায় কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জৈন্তাপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের দায়িত্বরত সাংবাদিকরা। এছাড়াও একাত্বতা প্রকাশ করেছেন জৈন্তাপুরে থাকা সকল শ্রেণী পেশার সংবাদকর্মীরাও। এ ঘটনায় আতঙ্ক ও সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে সাংবাদিক মহলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জৈন্তাপুরে যোগদানের পর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিয়েছেন। সীমান্ত এলাকাবর্তী জৈন্তাপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমকারীদের গোপনে মদদ যুগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বড়ো অংকের কাড়ি কাড়ি টাকা। অবৈধ সিন্ডিকেট চোরাকারবারি, বালু-পাথর, ভূমি খেকো চক্রের যোগানদাতা এই ওসি’র সীমাহীন দৌরাত্ব তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সকল শ্রেণী পেশার লোককে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে ওসি সাহেব চোরাকারবারি মামলায় নাম জড়ানোর হুমকি দিয়েও হাতিয়ে নেন টাকাকড়ি। এমনটি একাধিক মোবাইল ফোনের অডিও রের্কড প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌছেছে। একাধিক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতীয় চিনি কান্ডের কথিত মামলায় তাদের নাম জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। শুধু তাই নয় ভারতীয় ৫০ বস্তা চিনিসহ দুইজনকে আটক করলেও দফারফা করে ২৫ বস্তা চিনি দেখিয়ে মামলা দিয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করেন। গায়েবকৃত ওই চিনির হিসেব দামাচাপা দেন স্থানীয় কিছু হলুদ সাংবাদিককে দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। তাও আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জব্দকৃত চিনিসহ আটকদের ছবি ভাইরাল করে। অথচ ঐদিন রাতে এ ঘটনায় নিরীহ দুইজন ব্যক্তিকে মামলায় হয়রানিমূলক ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। একই ভাবে আরেকটি ঘটনায় আরও একজন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কুড়ি হাজার টাকা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছাত্র-জনতা মিলে ওসি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী হরিপুর এলাকায় পালনের আয়োজন করলে সেটা পন্ড করে দেয় একটি রাজনৈতীক দলের কর্তারা। সেখানে বৈষম্যহীণ রাষ্ট্র গঠনের পূর্ব শর্তকে উপেক্ষিত রেখে তিনি রাজনৈতীক দলের বাস্তবায়ন এজেন্ডা অপচেষ্টায় লিপ্ত। তখনকার সময় এবিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার এর সরকারী মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাফাই দিয়ে প্রতিবেদক’কে বলেন, এটাতো বায়বীয় কোন বিষয় না, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তারা লিখিত অভিযোগ দাখিল করুক। হুট করে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা এটাতো কি রকম হয়ে যায়। অপরএক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, না পুলিশ কোন দলের হয়ে কাজ করছেনা, আমরা কোন দল বুঝিনা, আমরা আইন বুঝি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি পুরো বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, মানববন্ধন কর্মসূচী সভা কেনও রাজনৈতীক দলের নেতাকর্মীদের কথায় পন্ড করা হলো সেটা আমার জানা নেই। আমার পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ধরণের কথা বলা হয়নি। একপর্যায় তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, এটা তাদের বিষয় তবে ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি আমার নলেজে নেই কিন্তু বিষয়টি আমি আবার জানিও!
এই নারকিয় ঘটনার পরে ওসি এবার আলোচানার জন্ম দিলেন সাংবাদিক নাজমুলের হুমকি দাতাকে আশ্রয়দানের পর।তিনি অবৈধ বালু উত্তোলনকারি পরিবেশ বিনষ্টের মুল হোতাদের রক্ষায় বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরাধীকে আইনের আওতায় না এনে এরকম অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে গেছেন। কথিত ওসির কাছে ন্যায়বিচারের চেয়ে চাঁদা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি লক্ষণীয়।
অভিযোগ রয়েছে, এই দূরন্ত ওসি যোগদানের পর জৈন্তাপুর বাজার হতে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী ও গরু-মহিষ থেকে প্রতিরাতে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। বিজিবি রাজবাড়ি ক্যাম্পকে ব্যবহার করে এই চাঁদা উত্তোলণ করা হয়। জৈন্তাপুর গোয়াবাড়ি এলাকার পাহাড় (টিলা) বিনষ্টকারী ও পাথর উত্তোলনকারীদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকেন বড়ো অংকের চাঁদা। তিনি জৈন্তাপুরে আসার পর ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় দুইজনের প্রাণহানিও ঘটেছে। সর্বশেষ এবার সাংবাদিকদের টেলে দিচ্ছেন মৃত্যু মুখে।
এবিষয়ে জানতে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন চোরাচালান আটকে আমাদের অভিযান অভ্যাহত আছে, বালি- পাথর উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন সব অবৈধ কাজে আমার অভিযান চলমান, তবে সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়েযান। তিনি যোগদানের পর অভিযান দিয়ে কি পরিমান চোরাইমাল আটক করছেন জানতে চাইলে শুধু বলেন আমার অভিযান চলমান।
এব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার অডিও রের্কডটি তার কাছে পৌছেছে। তিনি পুলিশের সাথে যোগযোগ করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকদের সহযোগীতা নেই। সেখানে কেউ আমার নাম ব্যবহার করলে সেটা তার ব্যক্তিগত।
এরপর যা থাকছে বিকাল বার্তায় চোখ রাখুন?