জেলা প্রতিনিধি বরগুনা।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহ আঘাতে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। প্রচণ্ড বাতাস, বন্যা, ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলের জনপদগুলো, যা আজও হাজার হাজার মানুষের জীবনে অমোচনীয় ক্ষতের স্মৃতি বহন করে।
২০০৭ সালের সেই রাতে সিডরের তাণ্ডবে বাংলাদেশের বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, বাগেরহাটসহ দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা ও অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ড বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে হাজারো ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। সুন্দরবনের একটি বড় অংশও সিডরের আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ, নিখোঁজ হন অনেকে, এবং অসংখ্য মানুষ চরম মানবিক সংকটে পড়ে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে, স্থানীয়দের মতে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে পটুয়াখালী, বরগুনার মাঝেরচর, ও ঝালকাঠির মত অঞ্চলে হাজার হাজার ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। অনেক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এবং সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেখানে অসংখ্য গাছপালা, পশুপাখি ধ্বংস হয়ে যায়। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে।
সিডরের পর সরকারের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছিলো। খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা, অস্থায়ী বাসস্থান সরবরাহ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিলো। তবে অনেক জায়গায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছিল।
ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে সিডরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য উন্নত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, দুর্যোগ সতর্কবার্তা সম্প্রসারণ, ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় সিডর আজও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্নের স্মৃতি। সিডরের মতো দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের আরও শক্তিশালী এবং প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি রক্ষা পায়।