ক্রাইম রিপোর্টার জসিম হোসেন ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষে মহব্বত হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রোববার সকালে উপজেলার নাকোবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মহব্বত হোসেন একই এলাকার বাসিন্দা। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল হাওলাদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
নিহত মহব্বত হোসেন উপজেলার নাকো বাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত হবিবর বিশ্বাসের ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় মহব্বত হোসেনসহ কয়েকজনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে যশোর ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে ফরিদপুরে পৌঁছালে মহব্বত হোসেনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই জামাল ইউনিয়নের বিএনপি’র দু’টি গ্র“পের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। রোববার দুপুরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে রড, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রোববার সকাল সাতটার দিকে জামাল ইউনিয়নের বড় তালিয়ান গ্রামের আবদুল লতিফের বাড়িতে হামলা চালান মাহফুজুর রহমানের অনুসারীরা। এ সময় হামলাকারীরা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করেন। হামলার পর গ্রামে মহড়া দিচ্ছিলেন মাহফুজুর রহমানের লোকজন। সকাল ১০টার দিকে তাঁদের প্রতিহত করতে যান নজরুল ইসলামের অনুসারীরা। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মহব্বত আলী, তাঁর ভাই ইউনুচ আলী, প্রতিবেশী রেজাউল ইসলাম, রেফাজুল ইসলাম ও বড় তালিয়ান গ্রামের মিকাইল হোসেন আহত হন। এর মধ্যে মহব্বত আলী ও ইউনুচ আলীর অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। পথে মহব্বত আলী মারা যান। গুরুতর আহত ইউনুচ আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সংঘর্ষের পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনা বাহিনীকেও ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। নিহত মহব্বতের বাড়ি উপজেলার নাকোবাড়িয়া গ্রামে। তিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মোলার সমর্থক বলে স্থানীয় লোকজন জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবদুলাহ আল মামুন জানান, আহত পাঁচ রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন। সবার শরীরে ধারালো দা ও রড দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের ঢাকা ও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সহিদুল ইসলাম হাওলা বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে এসেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নে বিএনপি’র দুই গ্র“পের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। একাধিকবার স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। রাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে এবার প্রাণ গেল একজনের। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
Leave a Reply