্
ইমরান সরকার গাইবান্ধা:- উন্নয়নের বঞ্চনায় দীর্ঘদিন ধরেই গাইবান্ধা জেলা জুড়েই পড়ে রয়েছে পিছিয়ে। অথচ এ জেলার সর্বস্তরের মানুষ চায় উন্নয়ন ও সমান সুযোগ, চায় শিল্পের ছোঁয়া এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। আজ সেই দাবিকে ঘিরেই বিরোধমুক্ত শান্তিপ্রিয় অঞ্চল গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের সাঁকোয়া ব্রিজ এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের দাবিতে সাকোয়া ব্রিজ EPZ বাস্তবায়ন মঞ্চ, গাইবান্ধা’র উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৮ জুলাই শুক্রবার সকালে পৌর শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাকোয়া ব্রিজ EPZ বাস্তবায়ন মঞ্চ এর সভাপতি এ্যাড. কুশলাশীষ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ফারুক কবীরের আহ্বানে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু, গাইবান্ধা জেলা বারের সদস্য এ্যাড. মোহাম্মদ আলী প্রামানিক, রবিদাশ ফোরামের সভাপতি সুনীল রবিদাস, রবিদাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খিলন রবিদাস, আইনজীবী সহকারী আব্দুল হাই, সমাজকর্মী মনির হোসেন সুইট, সাদেকুল ইসলাম, জিহাদ প্রধান, মানবাধিকার কর্মী কাজি আব্দুল খালেক, সোমা ইসলাম, কাজি আব্দুল ওয়াদুদসহ অন্যান্যরা।
বক্তারা বলেন, গাইবান্ধা আজ উন্নয়ন থেকে ছিটকে পড়া এক ‘পকেট শহর’, যেখানে নেই শিল্প, নেই কর্মসংস্থান, নেই সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার। অথচ এই জনপদের পাশে, সাঁকোয়া ব্রিজ এলাকায় যদি ইপিজেড গড়ে ওঠে, তাহলে গোটা জেলার চিত্রই বদলে যাবে। তারা বলেন, গাইবান্ধার সাবেক জেলা প্রশাসক ড. কাজী আনোয়ারুল হক এই এলাকাকে কেন্দ্র করে ইপিজেড গঠনের সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন, যেটি গাইবান্ধাবাসী আন্তরিকভাবে সমর্থন করেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করে এই প্রস্তাব বাতিল করে আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীর মত একটি বিরোধপূর্ণ এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের চেষ্টা করছে, যা মানবিক ও সুশিল মানুষের আপত্তির মুখে ইতিমধ্যেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আগামীতে নির্যাতিত মানুষের পক্ষেই থাকবে গাইবান্ধার সচেতন মানুষ।
বক্তারা বলেন, সাঁকোয়া এলাকায় ইপিজেড হলে রয়েছে সহজ যোগাযোগ—রেলপথ, রাজপথ, নৌপথ, এমনকি হেলিপ্যাডও নিকটেই। এতে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে হাজারো মানুষের। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলার মানুষ ও আশপাশের জেলার মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। গাইবান্ধা জেলার সাথে চারিদিকে সারাদেশ ও বিশ্ব সংযোগ রয়েছে,তাই অঞ্চলটি ইপিজেড এর জন্য হতে পারে আদর্শতম স্থান।
তারা আক্ষেপ করে বলেন, গাইবান্ধার উন্নয়নকে উপেক্ষা ও পরিবেশগত (EIA) বা সামাজিক প্রভাব (SIA) মূল্যায়ন ছাড়াই বর্তমান জেলা প্রশাসকের একতরফা সিদ্ধান্তে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের দাবীকৃত বিতর্কিত উর্বরা ফসলী জমিতে ইপিজেড করার ঘোষণা শুধু অনৈতিকই নয়, গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে চরম অবিচার। একটি নবীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবিত সিদ্ধান্তে জেলার ৯০% মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স-ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এই প্রস্তাবনায় সহযোগিতা করে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা গাইবান্ধার উন্নয়নে গাইবান্ধা সাঁকোয়া ব্রিজ এলাকায় অবিলম্বে ইপিজেড বাস্তবায়ন,বালাসীঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত টানেল/সেতু নির্মাণ,গাইবান্ধায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, গ্যাস সংযোগ ও আধুনিক রেল যোগাযোগ,সদর হাসপাতালের দ্রুত আধুনিকীকরণের দাবী জানান।
সমাবেশের শেষে বক্তারা আহ্বান জানান, “এসো, দলমত নির্বিশেষে গাইবান্ধা উন্নয়নের লক্ষ্যে এক হই—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বাস্তব স্বপ্ন গড়ে তুলি।” তারা বলেন, এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়—এটা গাইবান্ধার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।
এই জনপদের মানুষ উন্নয়নের আলো দেখতে চায়, কাজের সুযোগ চায়, স্বপ্নপূরণের পথ খোঁজে।
সেই পথ শুরু হোক সাঁকোয়া ব্রিজ এলাকায় ইপিজেড বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।