ইমরান সরকার:- গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর ইপিজেড দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে ঘন্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আদিবাসী সাঁওতালসহ উপজেলার সর্বস্তরের জনতা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী পৌর শহরের চারমাথা মোড়ে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয় আদিবাসী সাঁওতাল ও জনতা।
এই কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এম এ মতিন মোল্লা, আদিবাসী নেত্রী এমিলি হেমব্রম, মুফতি তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, সাঁওতাল নেতা মিখাইল বেসরা, সলেমোন হাজদা, ডা. জাহাঙ্গীর আলম ডাবলু, অবসরপ্রাপ্ত নেতা সদস্য আবু রায়হান রাশেদ, সার্জেন্ট আব্দুর রাজ্জাক, সংগঠক রফিকুল ইসলাম, ডা. শরিফ শুভ, মাকসুদ রহমান সহ আরও অনেকে। দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ও ঢাকা-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কে শত শত যানবাহন আটকে পরে। অবস্থান কর্মসূচি থেকে ইপিজেড বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাসের জন্য অপেক্ষা করা হয়। মহাসড়কে যানজট দীর্ঘায়িত হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম, গাইবান্ধা সেনা ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে উপস্থিত হয়। পরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনতাকে আশ্বাস দিলে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এরপর বিকেলে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হাতে তুলে দেয়া হয়।
বক্তারা চিনিকলের জমিতে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইপিজেডের নাম দেওয়া হয় ‘রংপুর ইপিজেড’। বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চিনিকলের মালিকানাধীন ১৮৪২ একর জমির মধ্যে ৪৫০ একর জমি বেপজাকে বুঝিয়ে দেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন চিহ্নিত ভূমিদস্যু অন্যান্য জেলা থেকে জমির ভাগ দেয়ার কথা বলে কিছু সাঁওতাল লোকজনকে এনে তীর-ধনুক ও নানা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে খামারের জমি দখল নেয়। এই জমি বর্তমানে সম্পূর্লরুপে ভোগ করছে ওই ভূমিদস্যুরা। তারা ইপিজেডের বিরোধিতা করার জন্য জেলা পর্যায়ের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করছে। অথচ এখানে ইপিজেড হলে দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে সাঁওতালরা অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু একটি মহল এর বিরোধিতার কারণে ইপিজেড বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।
প্রসঙ্গত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের ইক্ষু খামারের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ পরিস্থিতিতে সরকার শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।