সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো এ এ রানা:
:: দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এক সপ্তাহের জন্য জৈন্তাপুরের সিকনাগুল ও দরবস্ত বাজার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকায় সিকনাগুল ও ২ লক্ষ টাকায় দরবস্ত দাম হাকিয়ে প্রাথমিকভাবে ইজারাদার নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে মঈনুল ইসলাম ও মাওলানা আবু হানিফ নামের দুই ইজারাদার।
উল্লেখ্য দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অবশেষে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ও সিকনাগুল দুটি পশুরহাট এক সপ্তাহের জন্য ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করেছিল জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন। এর আগে এই দুটি বাজার অবৈধভাবে চলছে বলে জাতীয় দৈনিক বিকাল বার্তা, চ্যানেল ২৬, সময় টিভি বাংলা ও তালাশ টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিলো। এসব প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিলাম আহবানের অনুমতি দেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলাম আহবান করেন।
সেই আহবানে সারা দিয়ে দুটি বাজার লিজ নিতে ৯ জন ইজারার অংশগ্রহণ করেন। ২৮ মে বুধবার দুপুর আড়াইটায় জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা মহোদয় এর কার্যালয়ে সকল ইজারাদারদের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হলে দেখা যায় দরবস্ত বাজারে মাত্র একজন ইজারাদার অংশ নেন এবং বাকী ৮ জন ইজারাদার সিকনাগুল বাজারের নিলামে ভিন্ন ভিন্ন দাম হাকিয়েছেন। দরবস্ত বাজারে আর কোন ইজারাদার অংশ না নেয়ায় যিনি দরপত্র দাখিল করেছেন তিনি মাওলানা আবু হানিফ এবং সিকনাগুল বাজার ইজারাদার ৮ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম ৪৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৫শত ৮৫ টাকা হাকিয়ে মঈনুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে ইজারাদার নির্বাচিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব পেতে যাচ্ছে।
দরবস্ত পশুরহাটে প্রতিদ্বন্দী না থাকায় একমাত্র ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও সিকনাগুল পশুর হাট সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারাদার মঈনুলকে বুঝিয়ে দিতেগেলে অপর ইজারাদারগন ভূমির অনাপত্তি নিয়ে আপত্তি করেন, ফলে তাকে অস্থায়ী পশুর হাট বুঝিয়ে না দিয়ে ২৯ মে বৃহস্পতিবার সার্ভেয়ারের মাধ্যমে সরেজমিন পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন দীর্ঘ ৩ যোগ পর জৈন্তাপুরের দুটি অবৈধ পশুর হাট ইজারা দেওয়ায় আমরা খুশি। তারা বলেন এক সপ্তাহে যদি ৪৩ লক্ষ টাকা হয় তাহলে ৩৫ বছরে ঐ অসাধু সিন্ডিকেট চক্র কতো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সেই হিসাব দূর্ণীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে বের করা দরকার।
উল্লেখ্য দরবস্ত ও সিকনাগুল বাজার দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ অবৈধভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ একটি প্রভাবশালী চক্র নিজেদের মালিকানাধীন বাজার দাবী করে ভাগবাটোয়ারা করে ভোগদখল করে আসছিল, দুটি বাজারেই পশুরহাট রয়েছে। শুধু তাইনা এই সিকনাগুল পশুর হাট থেকে বছরে প্রায় ৫/৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে চক্রটি আদায় করতো বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রথম বারের লিজে অংশ নিয়ে জৈতাপুরের সিকনাগুল বাজার সর্বোচ্চ ৪৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৫শত ৮৫ টাকায় নিলাম ডাক হাকিয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন মঈনুল ইসলাম নামের এক ইজারাদার। এখন ইজারার কাগজপত্র এবং দাখিলকৃত অনাপত্তিপত্রে দেখানো জমি ঠিক থাকলে তিনিই হবেন সিকনাগুল পশুর হাটের ইজারাদার। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব পেতে যাচ্ছে। ইজারাদারের অনাপত্তিপত্র জমি ছাড়াও বাজারভিটে হইওয়ে রাস্তার পশ্চিম দিকে সরকারি খাস জমি ও বাগানের জায়গা জবরদখল করে অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছিল ঐ প্রভাবশালী চক্রটি।
এদিকে ৩৫ বছর যারা ভোগদখল করে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন সেই চক্রটি লিজ বাতিলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ইকবাল হোসেন নামের আরেক ইজারাদারের জমির অনাপত্তিপত্র সঠিক বলিয়া ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকায় বাজারটি বৈধতার লেবাসে অবৈধভাবে ভোগদখল করতে চায়।
ব্যক্তি মালিকানায় কোথাও হাট-বাজার স্থাপন করা যাবে না
[২] ব্যক্তি মালিকানায় কোথাও হাট-বাজার স্থাপন করা হলে তা সরকার খাসজমি হিসেবে অধিগ্রহণ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ২০২২ইং।
২৯ মে সকালে সার্ভেয়ার জমির সঠিক তথ্যসংগ্রহ করতে গেলে অবৈধ প্রভাবশালী চক্রটি সার্ভেয়ারের সামনে ৪৩ লক্ষ টাকার ইজারাদারকে প্রকাশ্যে দিবালোকে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেয়।
হাটবাজার আইন ২০২৩ ইং এ উল্লেখ আছে
জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কেউ বাজার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেনা। যদি কেউ করে তাহলে ১ বছর বিনাশ্রমকারা দন্ড বা ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে, এমনকি উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
অপরাধ ও দণ্ড
১২। কোনো ব্যক্তি ধারা ১০ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া হাট ও বাজারের সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখলে রাখিলে অথবা উক্ত খাস জমির উপর কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থ দণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন ।
সরকারের রাজস্বের স্বার্থে বাজার এলাকার ৫০০ মিটারের ভিতরে রাস্তার পাশে খালি জমি থাকলেও সেখানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ করতে সচেতন মহলের দাবী।
Leave a Reply