কথা দাও/শেখ সাইদুল আলম সাজু
কথা দাও,
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য আমি এনে দেব
তোমার হাতের মুঠোয়,
কথা দাও, তুমি নেবে?
আকাশের লাজ-রাঙা আবীর দিয়ে
তোমাকে সাজাবো আপন হাতে,
কথা দাও, তুমি সাজাতে দেবে?
দিগন্তের মায়াবী শশীর ন্যায়
স্নিগ্ধ মনোরম আলো আমি ছড়িয়ে দেব,
কথা দাও, তুমি ছড়াতে দেবে?
হৃদয়ের সব উষ্ণতা দিয়ে ভালোবাসবো তোমাকে
নীরবে, নিভৃতে, একান্ত নিজের করে।
কথা দাও, তুমি ভালোবাসবে?
আজ হতে এক হাজার বছর পর হলেও
আমি তোমারই রব,
কথা দাও, তুমি আঁচল বিছিয়ে রাখবে?
যেখানেই থাকি, আমি ছুটে আসব তোমার কাছে
এক বুক ভালোবাসা নিয়ে,
কথা দাও, তুমি আলিঙ্গনে জড়াবে?
———–💖————
কবি শেখ সাইদুল আলম সাজুর “কথা দাও” কবিতাটি গভীর আবেগ ও ভালোবাসার প্রকাশ। কবিতাটিতে বিভিন্ন উপমা ও প্রতীকের মাধ্যমে প্রেমিকের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা এবং ভালোবাসার গভীরতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
কবিতাটি আলোচনা করা যাক:
প্রথম স্তবক:
কথা দাও,
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য আমি এনে দেব
তোমার হাতের মুঠোয়,
কথা দাও, তুমি নেবে?
—-এই স্তবকের মাধ্যমে কবি কবিতার মূল সুরটি বেঁধে দিয়েছেন। “কথা দাও” – এই আকুতিপূর্ণ আহ্বানের মাধ্যমেই কবিতার শুরু। প্রেমিক তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে একটি প্রতিজ্ঞা চাইছেন। তিনি পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য এনে তার হাতের মুঠোয় দিতে চান। এখানে “পৃথিবীর সব সৌন্দর্য” একটি বিশাল ও ব্যাপক ধারণা, যা প্রেমিকের অসীম ভালোবাসার প্রতীক। প্রশ্নবোধক “তুমি নেবে?” – এর মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রেমিকের আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ পায়, তেমনই অন্যদিকে প্রিয়জনের সম্মতি ও স্বীকৃতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও ধরা পড়ে।
দ্বিতীয় স্তবক:
আকাশের লাজ-রাঙা আবীর দিয়ে
তোমাকে সাজাবো আপন হাতে,
কথা দাও, তুমি সাজাতে দেবে?
—এই স্তবকে প্রেমিক আরও ঘনিষ্ঠভাবে তার ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে চান। তিনি আকাশের “লাজ-রাঙা আবীর” অর্থাৎ গোধূলির রক্তিম আভা দিয়ে প্রিয়জনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চান। “আপন হাতে” শব্দটি এখানে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যা তাদের সম্পর্কের গভীরতা ও আন্তরিকতাকে নির্দেশ করে। আবারও “কথা দাও, তুমি সাজাতে দেবে?” – এই প্রশ্নটি প্রিয়জনের সম্মতি ও সান্নিধ্যের আকাঙ্ক্ষাকেই ফুটিয়ে তোলে।
তৃতীয় স্তবক:
দিগন্তের মায়াবী শশীর ন্যায়
স্নিগ্ধ মনোরম আলো আমি ছড়িয়ে দেব,
কথা দাও, তুমি ছড়াতে দেবে?
—এখানে প্রেমিক তার ভালোবাসার স্নিগ্ধতা ও শান্তিময় রূপের কথা বলছেন। দিগন্তের “মায়াবী শশী” অর্থাৎ পূর্ণিমার চাঁদের শান্ত ও সুন্দর আলোকের মতো তিনি তার ভালোবাসা দিয়ে প্রিয়জনের জীবনে স্নিগ্ধতা ও মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে চান। “ছড়িয়ে দেব” – এই বাক্যটি তার ভালোবাসার ব্যাপকতা ও উদারতাকে বোঝায়। প্রত্যাশিত প্রশ্ন “কথা দাও, তুমি ছড়াতে দেবে?” আবারও সেই একই সুর – প্রিয়জনের স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণের কামনা।
চতুর্থ স্তবক:
হৃদয়ের সব উষ্ণতা দিয়ে ভালোবাসবো তোমাকে
নীরবে, নিভৃতে, একান্ত নিজের করে।
কথা দাও, তুমি ভালোবাসবে?
–এই স্তবকে প্রেমিক তার ভালোবাসার গভীরতম অনুভূতি প্রকাশ করছেন। তিনি তার হৃদয়ের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে প্রিয়জনকে ভালোবাসতে চান, তাও আবার “নীরবে, নিভৃতে, একান্ত নিজের করে”। এই তিনটি বিশেষণ তার ভালোবাসার গভীরতা, নিবেদন এবং ব্যক্তিগত ও আত্মিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। শেষ প্রশ্ন “কথা দাও, তুমি ভালোবাসবে?” – এটি যেন এতক্ষণ ধরে চাওয়া প্রতিদান, যা প্রেমিকের মনকে শান্তি দিতে পারে।
পঞ্চম স্তবক:
আজ হতে এক হাজার বছর পর হলেও
আমি তোমারই রব,
কথা দাও, তুমি আঁচল বিছিয়ে রাখবে?
–এই স্তবকটি প্রেমিকের ভালোবাসার চিরন্তনতা ও গভীর অঙ্গীকারের কথা বলে। তিনি বলছেন যে আজ থেকে হাজার বছর পরেও তিনি তার প্রিয়জনেরই থাকবেন। “আমি তোমারই রব” – এই দৃঢ় উক্তি সময়ের সীমা অতিক্রম করে তাদের ভালোবাসার অমরত্ব ঘোষণা করে। “কথা দাও, তুমি আঁচল বিছিয়ে রাখবে?” – এই প্রশ্নটি আশ্রয় ও নির্ভরতার প্রতীক। প্রেমিক চান তার প্রিয়জন যেন সবসময় তার জন্য অপেক্ষা করে এবং তাকে আশ্রয় দেয়।
ষষ্ঠ স্তবক:
যেখানেই থাকি, আমি ছুটে আসব তোমার কাছে
এক বুক ভালোবাসা নিয়ে,
কথা দাও, তুমি আলিঙ্গনে জড়াবে?
—শেষ স্তবকে প্রেমিক তার ভালোবাসার ব্যাকুলতা ও আকর্ষণের কথা বলছেন। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, তার প্রিয়জনের কাছে ছুটে আসবেন “এক বুক ভালোবাসা নিয়ে”। এই “এক বুক ভালোবাসা” তাদের সম্পর্কের গভীরতা ও আন্তরিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ। শেষ আকুতি “কথা দাও, তুমি আলিঙ্গনে জড়াবে?” – এটি মিলন ও একত্রতার আকাঙ্ক্ষা, যা ভালোবাসার পূর্ণতা দান করে।
মোটকথা, “কথা দাও” কবিতাটি প্রেমের একটি আন্তরিক ও আবেগপূর্ণ অভিব্যক্তি। কবি এখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপমা ব্যবহার করে তার ভালোবাসার গভীরতা, স্নিগ্ধতা, সৌন্দর্য এবং চিরন্তনতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আকাশের আবীর, দিগন্তের মায়াবী শশী – এই চিত্রকল্পগুলো কবিতাকে এক রোমান্টিক ও স্বপ্নিল আবহ দান করেছে।
কবিতার প্রতিটি স্তবকের শেষে “কথা দাও” এবং একটি প্রশ্নবোধক বাক্য ব্যবহার করার ফলে একটি বিশেষ অনুরণন সৃষ্টি হয়েছে। এটি একদিকে যেমন প্রেমিকের ব্যাকুলতা ও প্রত্যাশার প্রকাশ, তেমনই অন্যদিকে প্রিয়জনের সম্মতির গুরুত্বকেও তুলে ধরে।