আব্দুস শহীদ শাকির জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি।
সিলেটের জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেলেন লিটন আহমদ।আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ঘটিকার সময় জকিগঞ্জ পৌরসভার বিলেরবন্দ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।জানা যায়, সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার বিলেরবন্দ গ্রামের এক অসহায় পরিবার দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্দিদশায় দিন কাটাচ্ছেন। চার সন্তান, বৃদ্ধ অসুস্থ শাশুড়ী মা ও মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীকে নিয়ে পরিবারটির কর্তা জেসিমন একটি পাকা পাঁচফুট উচুঁ প্রাচীরের ভেতরে দিন কাটাচ্ছিলেন। তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটির প্রবেশমুখে দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে দিয়েছেন পাশের বাড়ির বিত্তশালী বাসিন্দা জকিগঞ্জ শহরের আজিজিয়া সেন্টারের মালিক এমাদ উদ্দিন ও তার ভাই এনাম আহমদ।বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আপোষ মীমাংসা চলছিল। আপোষ মীমাংসায় কোন সমাধান না হওয়ায় আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ ঘটিকার সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক সরওয়ার আলমের মৌখিক নির্দেশে জকিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম মুন্না ও পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণব বিশ্বাসের উপস্থিতিতে দেওয়াল ভেঙে ভুক্তভোগী পরিবারকে রাস্তা বের করে দেয়া হয়।উল্লেখ্য, প্রায় ৬মাস থেকে জকিগঞ্জ শহরের আজিজিয়া সেন্টারের মালিক এমাদ উদ্দিন ও তার ভাই এনাম আহমদের নির্মিত দেয়ালের ভেতরে বন্দি আছেন একজন মানসিক রোগী, বৃদ্ধ নারী ও চার শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ভুক্তভোগী জেসিমন বেগম গত ২৯ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। কিন্তু ইউএনও সরেজমিন পরিদর্শন করেননি। পরে ১ জুলাই উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর ইউএনও মো. মাহবুবুর রহমান জকিগঞ্জ থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন এবং প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও এনাম আহমদসহ উভয়পক্ষকে তাঁর অফিসে ডেকে আনেন এবং সমঝোতার উদ্যোগ নেন। তবে এই সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদারকে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একাধিক বৈঠক করলেও কোন সমাধান হয়নি। বৈঠকে প্রভাবশালীরা নানা টালবাহানা করে এবং এক পর্যায়ে ইকবাল আহমদ তাপাদারের চাপাচাপিতে প্রভাবশালীরা অমানবিক ও অবান্তর শর্ত জুড়ে দেয় ‘তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি’ করে এক বছরের জন্য দেয়ালের এক ফুট ভেঙে চলাচলের সুযোগ দেবে, এক বছর পর আবার রাস্তা বন্ধ করে দেবে। এই অযৌক্তিক ও অনিশ্চিত শর্তে জেসিমনের পরিবার রাজি না হওয়ায় প্রভাবশালীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে তারা আর কোনওভাবেই জেসিমনের পরিবারকে রাস্তা দেবে না। পরে জেসিমন পুনরায় ইউএনও’র কাছে সহায়তা চাইলে ইউএনও আবারও বিষয়টি ইকবাল আহমদ তাপাদারের কাছে আপসে পাঠান। এরমধ্যে গড়িয়ে যায় প্রায় আড়াই মাস কিন্তু কোনভাবেই প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিনরা দেয়াল অপসারণ করে রাস্তা দেয়নি। ফলে পরিবারটি গত ৬ মাস ধরে দেয়ালের ভেতরে পুরোপুরি অবরুদ্ধ ও অনেকটা সমাজচুত্য অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।