ক্রাইম রিপোর্টারঃ
এক সময়ের রিক্সাচালক আবুল কাশেম এখন কোটিপতি। সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার অন্ধকার রাজ্যের রাজা। অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে পরিচিত সুরমা মহলের কর্ণধার।
সিলেটের অন্ধকার জগতের এই নিয়ন্ত্রক কাশেম একাধারে শীর্ষ জুয়ারী, মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের গডফাদার। তার এসব অপরাধ নির্বিঘ্ন করতে বড়ইকান্দি এলাকার ফয়সলকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন জুয়া-মাদকের নিরাপদ আস্তানা “সুরমা মহল” নামক পাপরাজ্যে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে জিঞ্জিরশাহ মাজারের উন্নয়নের কাজের জন্য আনা হয় রড। সেই রড কাশেম বাহিনী লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
কাশেমের পরিচয় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জিঞ্জিরশাহ মাজার সংলগ্ন সাধুরবাজার বাশপালা মার্কেটে রেলওয়ের জমি লিজ নিয়ে শীর্ষ জুয়ারী কাশেম স্বপরিবারে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন যাবৎ।
একই স্থানে দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু চিহ্নিত অপরাধী এবং প্রভাবশালী পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য ফয়সলের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে।
তার অনৈতিক অপরাধ নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয়রা যাতে বাধাঁ দিতে না পারে সেজন্য স্থানীয় কিছু অপরাধীদের শেল্টারদাতা হিসেবে ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বরইকান্দি ১নং রোডের সুনামপুরের বাসিন্দা কুখ্যাত সন্ত্রাসী মাদক ব্যাবসায়ী কাশেমের জুয়ার বোর্ডের পার্টনার ফয়সল জিঞ্জির শাহ পয়েন্টের অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডের সাবেক সভাপতি ফয়সলের ডান হাত ছেছড়া রোকন । প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে।
এছাড়াও প্রভাবশালী শালিস বিচারক ও আওয়ামীলীগ নেতা হাজী ময়নুল ইসলাম, ২৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার তৌফিক বক্স লিপনের সময় ও এসেছে শেল্টারদাতা হিসেবে ।
কাউন্সিলর থাকাকালীন লিপন বক্সের সপ্তাহের হিসাব আলাদা করে দিয়ে দিতেন কাশেম।
লোক দেখানো কিছু অভিযান ছাড়া প্রশাসনের ভূমিকা নিরব, কারন ডিবি ও পুলিশ ফাঁড়িতে সপ্তাহের হিসাব চলে যায় নির্বিঘ্নে।
বর্তমানে আবুল কাশেম-ফয়সল ও কাশেমপর মেয়ে জেসমিন দক্ষিণ সুরমার শীর্ষ জুয়ারী, মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের আশ্রয়দাতা। যাহা সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় তা প্রমাণিত। যেমন মাদক ব্যবসায়ী পাক্কিকে জেল থেকে বের করা, সুরমা মহল আস্তানার পিছন থেকে চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার, ছিনতাকারী যারা আটক হয়েছে তারা সবাই কাশেমের জুয়ার বোর্ডের সদস্য। এসব ঘটনা এখন দক্ষিণ সুরমার আনাচে কানাছে আলোচিত হচ্ছ। এত কিছুর পরও পুলিশ কাশেম-ফয়সল ও জেসমিনকে আটক না করায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এদেরখুঁটির জোর কোথায়?
অনুসন্ধানে জানাযায় আবুল কাশেম ১৯৯৭-৯৮ইং সালে নোয়াখালী থেকে স্বপরিবারে সিলেট আসেন। আসার পর একটি কলোনীতে ভাড়াটে হিসেবে উঠেন। জিবীকা নির্বাহ করার জন্য রিক্সা চালানো শুরু করেন। রিক্সা চালিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার চালানো কঠিন হয়েযায় কাশেমের, তিনি রিক্সা চালানোর পাশাপাশি টুকাইয়ের মতো ভাংঙ্গারী কুড়ানো ও বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু এসব করে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার চলেনা এভাবে চলে যায় দুইবছর। পরিবার সচল রাখতে উপায় না পেয়ে কাশেমের স্ত্রী বাসা বাড়িতে জি এর কাজ শুরু করেন, এদিকে কাশেম ভাংঙ্গারী কুড়ানো বাদ দিয়ে ভাংঙ্গারী ব্যবসা শুরু করেন, পাশাপাশি রিক্সা চালানো বন্ধ করে বেবিট্যাক্সি চালানো শুরু করেন এখন তাদের সংসার মোটামুটি ভালো চলে। এদিকে তারা বাসা পরির্বতন করে চলেযান জিঞ্জিরশাহ মাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনীতে।
রেলওয়ে কলোনীতে আসার পর পরিচয় হয় ফয়সলের সাথে। এরপর তাহার পরামর্শে জড়িয়ে পরেন বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে। শুরু হয় কাশেমের নতুনভাবে পথচলা, জি এর কাজ ত্যাগ করেন স্ত্রীও। ২০০৫ইং সাল থেকেই সবকিছু ছেড়ে কাশেম জুয়ার ব্যবসায় মনোযোগী হোন, সঙ্গে ফয়সল ও মেয়ে জেসমিনকে রাখেন, পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করেন।
২০০৭ ইং সালে কাশেম জিঞ্জিরশাহ মাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনীর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ২০ ফুট প্রস্ত জমি রেলওয়ের কাছ থেকে ৭(সাত) লক্ষ টাকায় লিজ নেন। লিজ নেওয়ার পর সেখানে গড়ে তুলেন “সুরমা মহল” নামক এক অন্ধকার রঙ্গীন আস্তানা।
সেই আস্তানায় জুয়ার পাশাপাশি চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। সাধারণ মানুষের ধারনা কাশেম-ফয়সক-জেসমিন মাদক ব্যবসায় জড়িত। পরবর্তীতে কাশেম জিঞ্জিরশাহ মাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনী মার্কেটে আরও ৪ টি দোকান কোটা ২৮ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। শুধু তাইনা রেলওয়ে লিজের জমি থেকে আরও প্রায় ৫০ফুট অতিরিক্ত অন্য আরেক জনের লিজের জমি জোরপূর্বক ভোগদখল করছেন ফয়সলের ক্ষমতা বলে।
ফয়সলের কোন ব্যবসা বাণিজ্য না থাকলেও আলীশান বাড়ী ও ঘরের আসবাবপত্র দেখলে যে কেউ মনে করবে তাহার মাসিক ইনকাম কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকা। আর এসবই হচ্ছে জুয়ার প্রতারণা ও অবৈধ মাদক ব্যবসার টাকায়। কম করেননি কাশেমও তিনিও বর্তমানে কয়েকতলা বিল্ডিং য়ের মালিক। এই দুজন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বলে জানিয়েছন স্থানীয়রা।