ইমরান সরকার :- বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম দুর্গাপূজা। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অবধি পাঁচ দিন দুর্গোৎসব হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গা ষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গা দেবীকে মর্ত্যলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবের আমেজ নিয়ে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরে (বৃন্দাবন পাড়া) ব্যায়বহুল জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রথমবারের মতো নতুন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা।
২২ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ও সুদর্শন শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ ও কালী মন্দিরটির কাজ প্রতিষ্ঠাতা হরিদাস চন্দ্র বাবুর ঐকান্তিক ইচ্ছায় নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত এগিয়ে চলছে ।
শতাধিক দেব দেবীর মুর্তি এবং নান্দনিক কারুকার্য সাজানো সুবিশাল এক মন্দির সনাতন ধর্মলম্বীদের জন্য শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয় যেন মিলন মেলার একটি তীর্থ স্থান। দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে মূল ফটকের পাশেই রয়েছে বিশাল আকৃতির দেশের সর্ববৃহ ৩০ ফিট উচ্চতার শিব মূর্তি,বিশ্বের প্রথম ৫৩ ফিট শ্রী কৃষ্ণ এর বিগ্রহ যা দর্শনার্থীদের জন্য সুভাষ ছড়ানোর জন্য রয়েছে নানা প্রজাতির ফুল এবং ফুলের বাগান ও মনোমুগ্ধকর কারুকাজ।রয়েছি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা। এখানে থাকছে ১৪৪ টি ছোট বড় মন্দির,বিশ্বের সব চেয়ে উচু শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ যার উচ্চতা ৫৩ ফিট,৩০ ফুট উচ্চতা বিশ্বের ২য় আদিযোগী শিব,বৃদ্ধাশ্রম,সনাতনীদের ধর্মীয় শিক্ষা গুরুকুল,মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আবাসিক ভবন,আগের যুগের কাচাঁরী ঘর,প্রতিদিন থাকছে ফ্রি প্রসাদ,প্রত্যেক মাসের শেষ রবিবার থাকছে দেশ এবং বিদেশী কীর্তনীয়াদের লীলা কীর্তন ও গীতা পাঠ।
এরই অংশ হিসেবে মন্দিরটি তে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দেশ- বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য রূপ বিচিত্র্যময় নানা রকম আয়োজন শুরু করেছে মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা হরিদাস চন্দ্র বাবু। দূর্গা পূজা উপলক্ষে মন্দিরের প্রবেশের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তায় আলোকসজ্জা,প্রসাদ বিতরণ,রাত বিরাতে মন্দির প্রাঙ্গণে নানা রঙের ঝাড়বাতি যা ইতিমধ্য দৃশ্যমান। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে প্রকৃতির মতো সাজ সাজ রবে মন্দির সুসজ্জিত হবে।আর ও আয়োজনে ঢাকের বাদ্য আর শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হবে চারদিক।দেশের বিভিন্ন স্থান এমনকি বিদেশ থেকে দর্শনার্থীদের আগমন উপলক্ষে তাদের সুরক্ষার কথা ভাবে এবং পূজা অর্চনা করতে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে দিকটা বিবেচনা করে কঠোর নিরাপত্তা এবং জোরদার এর ব্যবস্থা করবেন মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হবে মণ্ডপ এবং আলোক সজ্জাও। কর্মকর্তারা বর্তমানে পুজো নিয়েই মেতে উঠেছেন। প্রথমবারের মত পুজোর বাজেট প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
আয়োজন উপলক্ষে মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা হরিদাস চন্দ্র বাবু সাংবাদিকদের জানায়, শারদীয়া দুর্গাপুজা আমাদের সব চেয়ে বড় পুজা।আমরা সকল সনাতনী মিলে উৎযাপন করবো এবং একে অপরের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিবো। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে দুর্গা পূজা উপলক্ষে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের ইতিবাচক উদাহরণ দেশ এবং দেশের বাইরে রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।(আযানের সময় আমার পুজার ঢাক ঢোল ও মাইক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হরিদাস বাবু)। মন্দিরের নিজস্ব পুরোহিত শ্রি শ্যামল চক্রবর্তী দুর্গা পুজা পরিচালনা করবে।
আমি দুর্গা পুজা উপলক্ষে তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ২০০০ সনাতনীকে ১টি কাপড়,১ টি ধুতি,১০ কেজি চাল,১ কেজি তেল,১ কেজি চিনি,১ কেজি ডাল,১ কেজি আটা দিয়ে তাদের পাশে থাকবো।
পরিশেষে, বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে বিসর্জন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দূর্গা পূজার নিরাপত্তা উপলক্ষে পলাশবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা যৌথভাবে সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করবে।পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নয়; এটি জাতীয় ঐক্য, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য অপরিহার্য।প্রশাসনের সক্রিয় উপস্থিতি শুধু নিরাপত্তা জোরদার করবে না, বরং সবার মনে আস্থা, শান্তি ও আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
এ বছরে পলাশবাড়ী উপজেলা জুড়ে ৫৬ টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।