মাসুদ রানা মাসুম, রুমা, বান্দরবান।
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত কেওক্রাডং পাহাড় ও জাদিপাই ঝর্ণা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবিতে স্থানীয় জনগণ, ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জাদিপাই ঝর্ণা দীর্ঘদিন ধরেই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। প্রতিবছর শীত মৌসুমে হাজারো ভ্রমণপিপাসু এই এলাকায় ছুটে আসেন। এর ফলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গাইড, জিপ গাড়ি চালক, নৌযান চালক, পাহাড়ি কুটির শিল্পের কারিগর ও ব্যবসায়ীরা জীবিকা নির্বাহ করেন।
গত কয়েক বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলে কুকি-চিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নিরাপত্তা জটিলতার কারণে বগালেক, কেওক্রাডং ও জাদিপাই ঝর্ণা সহ রুমার সব পর্যটন স্পট পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। এতে স্থানীয় পর্যটন খাত স্থবির হয়ে পড়ে এবং শত শত পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
সম্প্রতি প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বগালেক পর্যটন কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, শীত মৌসুমে কেওক্রাডং ও জাদিপাই ঝর্ণাও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বর্তমানে রুমা উপজেলায় ৬২ জন নিবন্ধিত গাইড, শতাধিক জিপ গাড়ি চালক ও হেলপার, পাহাড়ি নারীদের কুটির শিল্প, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবার পর্যটন নির্ভর। দীর্ঘদিন পর্যটন বন্ধ থাকায় এরা সরাসরি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন।
গাইড মোঃ আলমগীর বলেন, “শীত মৌসুমে পর্যটন বন্ধ থাকলে আমরা পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। বগালেক খোলার খুশি দেখেই আমরা আশা করি এবার কেওক্রাডং ও জাদিপাই ঝর্ণা খুলবে।”
বগালেক নারী উদ্যোক্তা সিয়াম বম জানান, “পর্যটক না এলে আমাদের কুটির শিল্প ও হস্তশিল্প পণ্য বিক্রি হয় না। কয়েক বছর ধরে আমরা এবং আমাদের পরিবার বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন আসন্ন শীত মৌসুমে কেওক্রাডং ও জাদিপাই ঝর্ণা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রেখে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত টহল ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার।
তারা আরও জানিয়েছেন—
সড়ক যোগাযোগ, গাইড, গাড়ি চালক ও আবাসনের মান উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।কমিউনিটি-ভিত্তিক ট্যুরিজমে সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।দীর্ঘদিন পর্যটন খাতে জড়িত ক্ষতিগ্রস্ত গাইড, জিপ চালক, হেলপার, কুটির শিল্পী ও পাহাড়ি-বাঙালি পরিবারগুলোর আর্থিক ক্ষতি পূরণে সহায়তা দিতে হবে। স্থানীয়রা মনে করছেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত রাখা হলে শুধু পর্যটকরাই নয়, বরং শত শত পরিবার জীবিকার সুযোগ পাবে, স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে এবং দেশের পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।
অতএব, সকল প্রশাসনের প্রতি আহ্বান— যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসন্ন শীত মৌসুমে কেওক্রাডং পাহাড় ও জাদিপাই ঝর্ণা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক।